প্রায় দেড় বছর হয়ে গেল। এর মধ্যে আর বাড়ি ফেরা হয়ে ওঠেনি। চাকরি সূত্রে এদিক ওদিক ট্রান্সফার হতে হতে এদিকে আর আসতে পারিনি। আমার ছেলেবেলার শহর দুর্গাপুর, পশ্চিম বঙ্গের এক অন্যতম ইন্ডাস্ট্রিয়াল শহর। বিখ্যাত স্টিল সিটি হিসাবে এটি পরিচিত।
২০০০ সাল এর পর থেকে ভারতের বেশ কয়েকটি শহর হুড়মুড়িয়ে বেড়ে গেছে, মূলত আই টি সেক্টর এর জন্য। কিন্তু আমার এই ছেলেবেলার বাসস্থান প্রায় একই রয়ে গেছে। ২০০৬ সালে এ শহর ছেড়ে গেছিলাম ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভর্তি হওয়ার জন্য। আজ আমরা ২০১৬ তে পা ফেলতে যাচ্ছি। দশটি বছর কেটে গেল, কিন্ত যদি কোনো আই টি সেক্টর ওরিয়েন্টেড শহর এর সাথে তুলনা করা হয় তাহলে পরিবর্তন সেরম কিছুই হয়নি। সে ভাবে বিচার করলে এই দশ বছরে দুর্গাপুর পিছিয়ে পড়েছে। উন্নতি ও পরিবর্তন এর খুব কমই রেশ পাওয়া গেছে এখানে। নইলে এর ভৌগোলিক স্থান এর সুবিধা ও উন্নতির চেষ্টা করলে অনেক এগিয়ে যেত আমার এ শহর।
কার না ভালো লাগে নিজের জন্মস্থান এ ফিরে পরিবর্তন দেখা, উন্নতির সম্মুখীন হওয়া?
কার না ভালো লাগে নিজের জন্মস্থান এ ফিরে পরিবর্তন দেখা, উন্নতির সম্মুখীন হওয়া?
হাঁ। কয়েকটি শপিং মল আর মাল্টিপ্লেক্স আছে যেখানে ভিড় খুবই কম। এখন আবার দুর্গাপুরের ডোমেস্টিক এয়ারপোর্ট ও হয়েছে যেখান থেকে রোজ দুটি বিমান দিল্লির জন্য রওনা দেয়। কিন্তু আবার সেই একই প্রশ্ন। কটি টিকিট কাটা হয় সে বিমান এ রোজ। যেটুকু শহরের উন্নতি হয়েছে তা মুছে যাচ্ছে বা যাবে, কারণ এই ইনফ্রাস্ট্রাকচার ও মডেল কে সমর্থন করার মতো জনসংখ্যা এখানে বিশেষ নেই। দুর্গাপুর এর ইতিহাস খুব ছোট আর তার মূল অংশ দুর্গাপুর স্টিল প্লান্ট ও আরো কয়েকটি ইন্ডাস্ট্রি কে ঘিরে। এরাই এ শহরের শিরদাড়া।
তবে বেশি না বদলে থাকা এই শহরে, এই বাড়িতে অনেক দিন পর এসে এবার যেন কেমন একটা বিচ্ছিত সম্পর্ক অনুভব করলাম। প্রতিটা স্ট্রিট এ আগে পাথরের একটি স্ল্যাব এর উপর স্ট্রিট এর নম্বর লেখা থাকতো। কালের প্রকোপে তা উঠে গিয়েছিল বটে কিন্তু আমাদের পাড়ার সেই ১৯ নম্বর পাথরের স্ল্যাবটির সাথে এক নির্বাক সম্পর্ক দীর্ঘ বছর ধরে গড়ে উঠেছিল। পাথরে লেখা স্ট্রিট এর নম্বর গুলোকে আমি একটু মিস করছিলাম। এখন বড় বড় লোহার নীল চকচকে ব্যানার এর উপর তা লেখা।
ছোটবেলা থেকে আমাদের ১৯ নম্বর স্ট্রিট এর রাস্তা ছিল ভাঙা পিচে মোরা, একটা দুটো বড় গর্ত কিছু জায়গায়। বাবার স্কুটার এর পিছনে বসে যখন শীতকালের রাতে চোখ মুখ ঢাকা দিয়ে টিউশন থেকে ফিরতাম, আমাদের এই রাস্তার ঝাকুনিটা বুঝিয়ে দিত, আমি বাড়ির কাছে চলে এসেছি। আজ বাড়ি ঢোকার সময় মিস করেছি সেই চেনা ঝাকুনিটা।
প্যাডেল করা রিকশা কই দেখলাম না। ই রিকশা তে ছড়াছড়ি।
এসব এর মাঝে, দেখে বেশ ভালো লাগলো আমাদের পাশের বাড়ির কাকু সেই পুরোনো বাজাজ স্কুটারটি এখনো বেশ চালিয়ে যাচ্ছেন।
সন্ধেবেলায় বেরিয়ে পরলাম মোপেড নিয়ে আশপাশ টা একটু ঘুরে বেরাতে। রাস্তা ঘাট, স্টুডেন্টস কম্পিউটার একাডেমী, গোলায়, মাঠ ও বিল্ডিং সব একই রয়ে গেছে।
বেরোবার সময়, মা বলেছিল চপ খেলে নিয়ে আসতে। আলুর চপ আর মুড়ি সন্ধেবেলার এক প্রিয় খাবার ছিল। ৩ টাকার আলুর চপ। মানতে হবে, দাম ও বিশাল কিছু একটা বারেনি। ডি সেক্টর মার্কেট থেকে তার স্বাদ ও মিটিয়ে নিলাম। একটার জায়গায় ৩ টে আলুর চপ ও একটা ডিমের চপ। শীতকালের এক সন্ধের খাবার এর চেয়ে ভালো কি হতে পারে।
সব মিলিয়ে মনে হচ্ছে এসব না পাল্টানোই ভালো। আমার শহর দুর্গাপুর যেমন আছে তেমনটিই থাক। স্মৃতি গুলোকে টাটকা রাখার এর চেয়ে ভালো আর কি উপায়?
osadharon chand!...e amader moner sohor, chhelebelar sohor..agaami dine amra jodi kichu ei sohor e korte partam chand..khub bhalo lagto..
ReplyDeleteDreams keep us going... let's never stop dreaming...
Delete