One Living Life: তার জন্যে

Tuesday 7 June 2016

তার জন্যে

আজ যে এই লিখতে বসেছি, তা আরো একবার তার ই দ্বারা inspired হয়ে | মামারবাড়ি, ছেলেবেলার প্রায় সবার কাছেই তাদের প্রিয় জায়গা| আমার কাছে এই বাপারটি কোনরূপ আলাদা ছিল না| দাদুর সাথে মাঠে ঘুরে বেড়ানো আর ছুটির বেশ কিছু দিন আমেজ নিয়ে কাটানোটাই ছিল লোভের বিষই| পড়াসুনো অবিস্সী করতে হত, কারণ মা কখনো সেটা থেকে রেহাই দিতেন না| তবু, বাড়িতে গরমের ছুটিতে পড়তে বসা আর মামারবাড়িতে বসে পড়ার মধ্যে অনেক তফাত ছিল|

প্রথমত টুকটাক ভুল হলে, বাবা আসেপাসে থাকার আশংকা একদম ছিল না| দিতীয়ত, মা পড়াতে বসাবার চান্স ও ছিল খুব কম| বেশির ভাগ দিন সকালটা দাদুই পড়াতেন| আর দাদু পড়ালে, টুকটাক ভুল বা অন্যমনস্ক হলে, মারের বদলে বরং একটু আদরই পাওয়া যেত| তবে একটু দিন গড়ালে, দাদু যেতেন গ্রামের কাজ দেখতে, আর সেই ফাঁকে কখনো মা এসে যাচাই করে যেতেন, সব ঠিকঠাক চলছে কিনা? এটাই ছিল আমার দিনের সব চেয়ে বড় চিন্তার বিষই| গোটা সকাল হেলেদুলে পড়ার পর, সেরম কিছুই এগত না, আর সেই দেখে মা প্রায় এক দু ঘা বসিয়েই দিতেন| সকালটা নাহই দাদু অনেক বাঁচিয়েছেন, কিন্তু এবার কি হবে?




যখন আমার দিনের এক ব্রম্হাস্ত্র টহল দিতে বেরিয়েছেন দত্তাবারুটিয়ার পারায় পারায়, তখন ও আমি কিন্তু মনে মনে মুচকি হেসে যাচ্ছি | মা এর মার আমি কিছুতেই খাব না | বাঁচাবেন কে? তিনি আমার মামারবাড়ির দ্বিতীয় ব্রম্হাস্ত্র, আমার "দিদা"| লক্ষ্য সুধু একটাই | যেই মা নিচের তোলা থেকে উপরে আসবেন, আমাকে ছুটে নিচের তলায় রান্নাঘরে দিদার কাছে চলে যেতে হবে | ব্যাস | আমার কাজ ও দিনের পরাসুনো শেষ | মা আর আমার গায়ে একটা দাগ ও লাগাতে পারবে না |

আমার দিদা ছিলেন বেশ খাদ্যরসিক মানুস | ঠিক খাদ্যরসিক না | কারণ তিনি নিজে খেতে ভালবাসতেন না, বরং বাকিদের চারিপাশে পেট ভরে খাওয়াতে বেসি ভালবাসতেন | নিচে ছুটে রান্নাঘরে যেতেই, দিদার প্রথম ভাবনা: "রূপনা নিচে এসেছে", ও প্রশ্ন, "চাচীর মিষ্টি খাবি?" দিদা আসলে এত খাওয়াত যে মাঝে মাঝে বিরক্ত হয়ে যেত আসে পাসের সবাই | কিন্তু এই চাচীর মিষ্টি ছিল স্পেশাল | যতই খাও না কেন, আমার দিদার বানানো চাচীর মিষ্টি ছিল সর্গীয় সুখ | আমি কখনই তা মানা করতে পারতাম না | যখন দিদার দেওয়া চাচীর মিষ্টি আমি মনের সুখে সাটাছি, তখন মা এক তলায় বসে আমার খাতা খুলে দেখছে, ঠিক কতটা লেখা/পড়া হয়েছে |

মিত্থ্যে বলব না | চিরকালই আমি যা পড়াসুন করে এসছি, তা মার খাবার মতনই | কিন্তু এরম করলে লেখা পড়া না শিখলেও, বাচার উপায়টা শিখতে হয় | যতক্ষণে মা বুঝেছে যে ছেলে কিছুই না পড়ে ফাঁকি দিয়ে বেরিয়ে গেছে, ততক্ষণে আমি আমার দুর্গের ভিতর নিরাপদে বসে রয়েছি | উপর থেকে জোর গলায় চিত্কার সোনা গেল, "আআই!! কি পড়েছিস তুই এতক্ষণ ধরে? সিগ্রী উপরে উঠে আই" | খুব সাভাব্হিক ভাবে মা তখন গেছেন রেগে, কিন্তু আমি যতই ছোট হই, মাথা তো আর খারাপ ছিল না ! কোন পাগলে সে সময় মা-এর কথা সুনে উপরে যাই? আরো খানিকক্ষণ চিল্লামিল্লির পর যখন সারা পেত না আমার থেকে, তখন মা নিচে নেমে আসত, ধরে উপরে নিয়ে যাবার জন্যে | আমি তখন আমার মা-এর... মা-এর কোলে | আমাকে ধরতে এসে লাভ কি! দিদা আমাকে তার আঁচলের পিছনে লুকিয়ে, আড়াল করে, উল্টে মাকে দিল ধমক, "একদম হাথ দিবি না আমার রূপনার গায়ে!!!" মনে মনে যদিও একটু ভয় হত, তবে একটা শান্তি ছিল যে, ঠিক যেমন আমি আমার মা কে টপকাতে পারি না, আমার মা ও তার মাকে অত সহজে টপকে আসতে পারবে না |

আগামী কয়েক ঘন্টা দিদার আসে পাশেই ঘুরে বেড়াতাম | পাছে মা আবার ধরে পড়তে বসিয়ে দেয়!! আবহাওয়া পাল্টালে ছুটে যেতাম খামারবাড়ির দিকে অথবা মরপে, যেখানে বেশির ভাগ সময় দাদুকে পাওয়া যাবে |

দিদার সাথে থাকলে ভালো জিনিসটা খাওয়া নিয়ে কোনো চিন্তা থাকত না | চিন্তা থাকত বেশি খাইয়ে দেবে তাই | গরমের ছুটির শেষে কোনো কোনো বার যখন দিদার সাথে কোথাও যেতাম, তখন ছিল আর এক সুন্দর সময় | বাসএ যা উঠবে আর যা চাইব, সবই পেতাম দিদার কাছ থেকে | অন্য সময় মা বা বাবার সাথে গেলে, বড়জোর একবার এক প্যাকেট বাদাম, একবার বোলপুরের চপ মুড়ি আর একবার একটা রঙিন পেপসি পাওয়া যেত | দিদার সাথে গেলে, বাদামটা তো প্রায় সব সময় ই সঙ্গে থাকত | শেষ হবার কোনো চান্স ছিল না, কারণ আগের প্যাকেট শেষ হবার আগেই নতুন প্যাকেট চলে আসত | তা ছাড়া যে কতবার কত প্যাকেট মটরসুটি, পেপসি, ঝালমুড়ি আরো কত কি যে দিদা কিনে দিত, তার কোনো হিসেব ছিল না |

সব মিলিয়ে ছেলেবেলার মামারবাড়ি ছিল খুবই মধুময় | তবে কিছু ছেলেবেলার অভ্যাস কাটানো বেশ মুশকিল | যেমন চাচীর মিষ্টির স্বাদ্খানা ভোলা অসম্ভব | কিন্তু আজ, ভেবে খুব কষ্ট হই যে সেই চাচীর মিষ্টির স্বাদ তো আর জীবনে কোনদিন পাব না! সেই আদর, সেই ভালবাসা, সেই স্নেহময় খাওয়া দাওয়া, সেই মানুষটাকে তো আর কখনো পাব না! আমি আসলে দুক্ষ কষ্ট থেকে এড়িয়ে যাই | কিন্তু যখন মনে পরে যে দিদা তো নেই, তখন একদম ভালো লাগে না! অনেক স্পেশাল বাপার ছিল দিদার! সুধু খাবার দাবার যেমন সেই তেল কই বা চাচীর মিষ্টি বা ঝাল ঝাল বাটি চচরী নই, আমার জীবনের প্রতেক টি ধাপে রয়েছে আমার দিদার দেওয়া মন্ডা, তার গোপালকে | যে কোনো রেসাল্ট বেরোনো হোক, বা শরীরখারাপ বা যে কোনো ঘটনা, দিদা তার রাধা-কৃষ্ণ (গোপাল) কে মন্ডা খাওয়াতেন | বলতেন, "দেখিস, সব ভালো করে দেবে আমার গোপাল"| সত্যি কিন্তু সব ভালো হয়ে গেছে চিরকাল|

আমি ভগবানএ বিশেষ বিশ্বাসী না, তবু মনে প্রানে জানি ও মানি, দিদার দেওয়া প্রতেকটি মন্ডা তার গোপালকে কোনো না কোনো ভাবে আমাকে জীবনে সুস্থ্য ও ভালো রেখেছে |  

No comments :

Post a Comment